মন্ত্রিসভা থেকে মুরাদের পদত্যাগ, ক্ষমা চাইলেন মা-বোনদের কাছে
- Riyan Sobhan Talha
- Dec 7, 2021
- 2 min read

নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। মঙ্গলবার ই-মেইলে পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সেটি তথ্য সচিবের দপ্তরে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
এদিকে এক ফেসবুকে পোস্টে নিজের ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তার জন্য ‘মা-বোনদের’ কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মুরাদ হাসান।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২০ মিনিটের দিকে স্যার পদত্যাগপত্র ই-মেইলে তার দপ্তরে পাঠিয়েছেন। পদত্যাগের জন্য তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণের’ কথা উল্লেখ করেছেন।
মুরাদ হাসান কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার কোথায় রয়েছেন, তা এই মুহূর্তে বলতে পারবো না।’
পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চাইলে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সচিব স্যারের অপেক্ষায় আছি। তিনি (সচিব) পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন।’
বিধি অনুযায়ী, পদত্যাগপত্র কার্যকর হওয়ার জন্য এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়তে হবে। সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করতে পারবেন এবং উক্ত মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে উক্ত মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটাবার পরামর্শ দিতে পারবেন।’
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে মুরাদ হাসান লিখেছেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সব সিদ্ধান্ত মেনে নেব আজীবন।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে চট্টগ্রামে আছেন বলে তার দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি আজ দপ্তরে আসেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা স্পাইস ডিজিটালকে জানান, প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে চট্টগ্রামে এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মুরাদ হাসান সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম আসেন। তবে তিনি কোনো প্রটোকলের জন্য আমাদের জানাননি। এখানে একটি হোটেলে উঠেছিলেন। এরপর সন্ধ্যায় তিনি সেখান থেকে চলে যান।’
এদিকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
এর আগে সোমবার মুরাদ হাসানকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত কয়েকদিন ধরেই বিতর্কিত মন্তব্য ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর এই নির্দেশ আসে।
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসন থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তার আসনটি জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবার তাকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর মুরাদকে প্রথমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আচরণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
গত কয়েকদিন ধরেই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আলোচনায় ছিলেন মুরাদ হাসান। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়েও আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন বর্তমান এবং সাবেক নেত্রী।
এরমধ্যেই রোববার মধ্যরাতে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল সেই অডিও ক্লিপের সত্যতা নিশ্চিত করেন চিত্রনায়ক ইমন। তিনি বলেন, ফোনালাপটি সঠিক। তবে এটা দেড় বছর আগের।
শাহনেওয়াজ সুমন/ মামুন শেখ







Comments