পানির নিচে ফসল, কৃষকের মাথায় হাত
- Riyan Sobhan Talha
- Dec 8, 2021
- 2 min read

স্পাইস ডিজিটাল:
ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুই একর জমিতে সবজি চাষ করেছিলেন পটুয়াখালীর লোহালিয়া গ্রামের রফিক মিয়া। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে তার জমির ৮০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক রফিক। স্পাইস ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন রফিক। বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেলো, আমি এখন কিভাবে ঋণ শোধ করবো?’
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে রফিক মিয়ার মতো উপকূলের হাজারো কৃষক মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোসহ চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জে বিস্তীর্ণ মাঠের আধপাকা ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় মাঠে পানি জমে যাওয়ায় আমনের বীজতলাসহ শীতকালীন সবজি ও রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির তালিকায় রয়েছে গম, ভুট্টা, মসুর, খেসারি, মটর, মাষকলাই, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনে, কালিজিরা, মিষ্টি আলু, মেথি, যব, শসা, গাজর, টমেটো, আলু ইত্যাদি।
বরিশালের বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সাবিনা ইয়াসমিন স্পাইস ডিজিটালকে জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী আমনের স্থানীয় জাতসহ শীতকালীন শাকসবজির বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে ২৫ হাজার হেক্টর আমনের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর খেসারির খেত, ৭ হাজার ৫০০ হেক্টরের শীতকালীন শাকসবজি, ২ হাজার ১৫৬ হেক্টরের শর্ষে, ৫৭৩ হেক্টরের মসুর ডাল, ২০৩ হেক্টরের গম, ২৮৮ হেক্টরের আলু ও ৩২ হেক্টরের আগাম তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে ফরিদপুরের কৃষক অনু মিয়া স্পাইস ডিজিটালকে বলেন, ‘আমার ক্ষেতের বেশিরভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ধার-দেনা করে এবছর সবজি চাষ করেছিলাম, কিন্তু জাওয়াদ এসে সব শেষ করে দিলো। আমরা এ ক্ষতি পোষাতে সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছি।’
ফরিদপুর কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তরুন সরকার জানান, জেলার ৯টি উপজেলার ৬৬ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমির মধ্যে ১৯ হাজার ৭০১ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে, যা মোট জমির ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলুর। এ ছাড়া শর্ষে, গম, বোরো বীজতলা ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাঁদপুরের আলু চাষি করিম হোসেন স্পাইস ডিজিটালকে বলেন, ‘এবার আশা করেছিলাম আলুর ভালো ফলন হবে, অবশ্য হয়েওছিলো। কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড় আমার স্বপ্ন শেষ করে দিলো। এবার ফলন যা আশা করেছিলাম তার অর্ধেকও আসবে বলে মনে হয় না।’
মতলব উত্তরের মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে প্রায় ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

কৃষকদের অভিযোগ, বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেক সেচ ও পানিনিষ্কাশন খাল অবৈধভাবে দখল করে সেখানে রাস্তা, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বানিয়েছেন প্রভাবশালীরা। এ কারণে নিচু জমিতে আটকে থাকা পানি সরছে না।
তবে চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রুহুল আমিন বলেন, ওই বেড়িবাঁধের ভেতরে জমির জলাবদ্ধতা দূর করতে পাউবোর দুটি পাম্প সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
স্পাইস ডিজিটাল/সুজন/মামুন শেখ








Comments