কুলি থেকে মিলিয়নিয়ার
- Riyan Sobhan Talha
- Dec 8, 2021
- 2 min read

বাণিজ্য ডেস্ক:
বড় হয়েছেন অভাবে। কখনো রাত কাটিয়েছেন না খেয়েই। পরিবারের বাড়তি আয়ের আশায় বাবার সাথে কাজ করেছেন কুলি হিসেবে। সেই থেকে শুরু হয় তার কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের গল্প। পড়ালেখা শেষ করে পাওয়া চাকরিও ছেড়ে দেন ব্যবসা করবেন বলে। সেই ব্যবসাই আজ তাকে বানিয়ে দিয়েছে এক সেলফ মেড মিলিয়নিয়ার। বলছিলাম, ভারতের ব্রেকফাস্ট কিং ‘পি সি মুস্তাফা’র কথা।
একটি কফি বাগানের কুলি হিসেবে কাজ করতেন পি সি মুস্তাফার বাবা। দিনে আয় হতো ১০ টাকারও কম। তাই তিন বেলা পেট পুড়ে খাবার খাওয়া তাদের কাছে ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো। বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাবার সাথেই কুলির কাজ করতেন মুস্তাফা। স্কুল ব্যাগ নামিয়ে পিঠে চাপাতেন ভারী কাঠের বাক্স। অল্প বয়সে এমন খাটুনির ধকলে ক্লান্ত হয়ে পড়তো শরীর। তাই সন্ধ্যা নামতেই ঘুম পেয়ে যেত তার। সে কারণে ফেল করেছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণীতে। তখনই ভেবে নিয়েছিলেন, পরিশ্রম করে বদলে দেবেন নিজের জীবন। বাবার সাথে কাজের পাশাপাশি বাড়তি মনোযোগ দেন পড়াশোনায়। দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় অর্জন করে নেন প্রথম স্থান৷ এরপর কলেজ পেরিয়ে ভর্তি হোন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। পড়ালেখা শেষে পেয়ে যান বহুজাতিক এক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনের চাকরি।
কিন্তু মুস্তাফার ইচ্ছা ছিল দেশেই কিছু করার। তাই তিনি ঠিক করলেন, ব্যবসা করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন নিজ দেশ ভারতে।
ভারতীয়দের অত্যন্ত জনপ্রিয় সকালের খাবার ইডলি-দোসা। একদিন মুস্তাফার এক আত্মীয় দেখলেন, স্থানীয় দোকানগুলোতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অস্বাস্থ্যকর উপায়ে ইডলি-দোসা বানানো হচ্ছে। তখন এই বিষয়টি নিয়ে মুস্তাফার সাথে কথা বললে তারা ঠিক করলেন এই ইডলি-দোসা তৈরির উপকরণ বানানো শুরু করবেন তারা।
একটি ৫০ স্কয়ার ফিট রান্নাঘরে ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিল পি সি মুস্তাফার প্রতিষ্ঠান আইডি ফ্রেস ফুড। শুরুতে প্রতিদিন বিশটি দোকানে একশ প্যাকেট ইডলি-দোসার উপকরণ তৈরি করতেন তিনি। একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড স্কুটারে করে তা পৌঁছে দিতেন দোকান ও গ্রাহকদের কাছে।
২০১৪ সালে একটি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি থেকে ৩৫ কোটি টাকা পেয়েছিল আইডি ফ্রেশ ফুড। তখন থেকেই বৃহৎ পরিসরে সাজানো-গোছানো হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
এখন ৮০ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গার কারখানা রয়েছে তার। যেখানে কাজ করছে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতিদিন ৫৫ হাজার কেজি ইডলি তৈরির উপকরণ, ৩.৫ লাখ পরোটা এবং ১০ কেজি ভাডা প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের। করোনা ভাইরাসের মহামারীর মাঝেও ২০২০ সালে পি সি মুস্তাফার প্রতিষ্ঠান আয় করেছে ২৯৪ কোটি টাকা।
রেডি টু মেক ব্রেকফাস্ট তৈরি করায় তাকে ডাকা হয় ব্রেকফাস্ট কিং নামে। ব্যবসার প্রসার ভারত ছাড়িয়েও নিয়ে গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং কো-ফাউন্ডার হিসেবে রয়েছেন।








Comments